Teleportation

 টেলিপোর্টেশন 



আমরা সব সময় ভাবি, যদি ভগবান আমাদের ডানা দিত । আমরা পাখির মত আকাশে উড়ে বেড়াতাম । কি ভালো হতো তাই না । আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করি, কোনো পথে পায়ে হেঁটে বা ট্রেনে বাসে চড়ে বা আকাশপথে বিমান ব্যবহার করে । এখন যদি আমি বলি এই দূরত্ব গুলি অতিক্রম করবো,  কিন্তু কোনো পথের সাহায্য নেব না । যথা স্থলপথ, জলপথ বা আকাশপথ । আপনি মনে করেন কলকাতা থেকে মুম্বাই কিছু সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলেন,  কিন্তু কোন পথ অতিক্রম না করে কিছু সেকেন্ডে । অর্থাৎ  কোন যাত্রা না করে এক পলকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়াকে টেলিপোর্টেশন বলে ।



টেলিপোর্টেশন দুটি ইংরেজি শব্দের মাধ্যমে তৈরি যথা টেলিকমিউনিকেশন এবং ট্রান্সপোর্টেশন । টেলিকমিউনিকেশন মানে আপনারা জানেন মোবাইল ,  টেলিফোন এবং জনপ্রিয় ইন্টারনেট । ট্রান্সপোর্টেশন মানে আপনারা ভালভাবেই জানেন বাস-ট্রেন, বিমান বা জাহাজ ।  যে কোন মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে যাওয়াই হলো ট্রান্সপোর্টেশন । টেলিপোর্টেশন এর মাধ্যমে আপনি পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত বিনা যাত্রায় পৌঁছে যাবেন ।  আমরা চাইলে কিছু সময়ের মধ্যে চাঁদে বা মঙ্গল গ্রহে বা  বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যেকোনো স্থানে পৌঁছাতে পারবো । এটা শুনে যতটা সহজ মনে হচ্ছে কিন্তু ততটা সহজ নয় ।




পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রানুযায়ী আমাদের পৃথিবীর বা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যে কোন বস্তু সবচেয়ে ছোট কণা বা পরমানু দ্বারা তৈরি ।  অর্থাৎ একটি বালির কণা থেকে শুরু করে আমাদের পৃথিবী, বিভিন্ন গ্রহ,  সূর্য , বড়ো বড়ো নক্ষত্র সবই এই ছোটো ছোটো  অসংখ্য পরমাণু কণা দিয়ে তৈরি ।  আবার পদার্থবিজ্ঞানের  কোয়ান্টাম জট তথ্য অনুযায়ী  (অর্থাৎ According to quantum entanglement theory of physics ) আমরা যদি নিজেকে টেলিপোর্টেশন করতে চাই । তাহলে এমন একটি যন্ত্র বানাতে হবে , যে যন্ত্র প্রথমে আমাদের শরীরে সমস্ত পরমাণু ভেঙে দেবে যাকে বলা হয় ডিম্যাটেরিয়ালাইস্ট ( Dematerialized) । তারপর সমস্ত পরমাণু গুলি কেমন ভাবে সাজানো ছিল সেই ডেটাগুলি টেলিকমিউনিকেশনের মাধ্যমে আপনার পছন্দ স্থানে স্ট্রিম করে দেবে । ওই যন্ত্রটি পুনরায় পরমাণু গুলিকে ডেটা অনুসারে সাজিয়ে ফেলবে যাকে বলা হবে রিমাটেরালাইস্ট ( Rematerialized ) । অর্থাৎ শরীরটি ঠিক যেমন ছিল তেমন ভাবে সাজিয়ে ফেলবে ।



কিন্তু আমি দুঃখিত,  কারণ এই কাজটায় অনেক অনিশ্চয়তা আছে । যেমন আমাদের শরীরে অসংখ্য পরমাণু আছে,  যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না ।বিজ্ঞানীরা একটা পরীক্ষার মাধ্যমে একরকম     এস্টিমেশন      করেছেন,                     যার পরিমাণ  ১০^২৮ টি বা  ১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ টি পরমাণু । একটা গবেষণার মাধ্যমে যানা গেছে, এই অসংখ্য পরমাণু কিভাবে সাজানো ছিল সেই ডেটা ইনফর্মেশন এর সাইজ ৩.০২ x ১০^৩২জিবি ( গিগাবাইট) । এই গবেষণা করা হয়েছিল ইউনিভার্সিটি  লেক্সচারে । আধুনিক ইন্টারনেট টেকনোলজি তে এই বিপুল পরিমাণের ডাটা স্ট্রিম করতে সময় লাগবে ৪.৫ x ১০^১৮ বছর । যা আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বয়সের থেকে সাড়ে তিন লক্ষ গুণ বেশি সময় ।




এর পরেও যদি আমরা ইন্টারনেটের ব্যান্ড উইথ বাড়িয়ে ফেলি তবে কি আমরা টেলিপোর্টেশন করতে পারবো ?  হাইজেনবার্গ এর আনসারট্যেনিটি রুল ( uncertainty rule )অনুসারে আমরা কোন পরমাণুতে থাকা ইলেক্ট্রনের হয় গতিবেগ বা লোকেশন যেকোনো একটা জানতে পারবো। দুটি একসঙ্গে জানতে পারবো না । অর্থাৎ মানব শরীরের সমস্ত পরমাণুকে আমরা একসঙ্গে De-materialized করতে পারবোই না ।  আর যদি আমরা করে ফেলি,  তবে তাকে Re-materialized  করলে,  হয়তো নতুন মানুষে পরিবর্তন হবে । যার চেহারা,  ব্যবহার সবকিছু বদলে যাবে । এই সমস্ত কিছু হবে কণাগুলির পুর্নসজ্জা ও জটের জন্য ।




এখন আপনি এই কথা শুনে খুবই আনন্দিত হবেন যে কালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি'তে ১৯৮০ সালে আলোর একটি ফোটন কণা কে কিছু দূরত্বে টেলিপোর্টেশন করতে পেরেছেন । পরীক্ষার সফলতা ধীরে ধীরে ১৪৩ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে । অর্থাৎ এখন আমাদের বিজ্ঞানীরা ফোটন কণাকে ১৪৩ কিলোমিটার পর্যন্ত টেলিপোর্ট করতে সক্ষম । এই ভাবে ধীরে ধীরে চলতে থাকলে যেকোনো যন্ত্রাংশ বা কোন রোবটকে যদি টেলিপোর্ট করা যায় , তবে হয়ত মানবসভ্যতা ধীরে ধীরে চাঁদে ও মঙ্গলে পৌঁছে যেতে পারে ।


BUY NOW AMAZON BUY NOW AMAZON





সমাপ্ত 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ