Black Box ( কালো বাক্স )


Black Box ( কালো বাক্স )





এক ব্যক্তি , নাম হীন, পরিচয় হীন , তিনি খুব ব্যাতি-ব্যাস্ত হয়ে , একটি ছোটো হাতি বা লরির মত কোনো এক গাড়ি জন্য , বৃষ্টি ভেজা এক নিঃসঙ্গ রাস্তার এক ধারে দাড়িয়ে আছে, অপেক্ষা করছে । এই বুঝি কোনো এক অতিথি এসে বলবেন, কোথায় যাবেন । ভাগ্যিস এখন বারিধারা , সেই ব্যক্তি সঙ্গ ত্যাগ করেছে । এইভাবে বেশ কিছু ঘন্টা কাটার পর , কোনো এক ভগবান , তার কাছে এসে বললেন, ও দাদা কোথায় যাবেন । পরিচয় হীন ব্যক্তি ভগবান দেখার মতো, বর চাইলেন , আপনার গাড়িতে এই বক্সটা রাখা যাবে । হ্যাঁ দাদা যাবে, আগে তো বলুন কোথায় যাবে । আমি ব্যারাকপুর যাবো । ব্যারাকপুরের কোথায় ? আমায়ে স্টেশনের কাছে নামিয়ে দিলে হবে । আচ্ছা বসুন, আমি বাক্সটা গাড়ির পিছনে তুলে দিচ্ছি । এই বলে , উনি গাড়ির পিছনে বাক্সটা তুলে, হাত ঝারতে ঝারতে, ড্রাইভিং  শীটে এসে বসলেন । ছোটো হাতি চলতে থাকল, ড্রাইভারের ইচ্ছায় ।




কিছুটা পথ যাওয়ার পর, হঠাৎ ড্রাইভার বলেন , ও স্যার ও স্যার ও দাদাঅআ, অজ্ঞাত এক ধ্যানমগ্ন ব্যক্তি, তার ধ্যান ভেঙে বললেন , আমায় কিছু বলছেন । হ্যাঁ স্যার আপনাকে বলছি, কিছু মনে করবেন না এতো বড়ো বাক্স , তারপর আবার খালি, নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ? উত্তর এলো- বাড়ি যাচ্ছি । কিন্তু স্যার , খালি কেন? উত্তর এলো - অনেক ভর্তি জিনিস , অনেক সময় খালি মনে হয়ে । আচ্ছা ড্রাইভার ভাই , আমাকে দেখে আপনার কি মনে হচ্ছে, আমার বয়স কত? স্যার তাও চল্লিশ হবে । হ্যা ঠিক বলেছেন । নাও একটু চালানোতে মন দাও । আজ্ঞে দাদা , একদম চিন্তা করবেন না । কিছুক্ষন পর ওই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি বললেন, ও ড্রাইভার ও রাস্তায় তুলছো কেন ? ও রাস্তা বন্ধ আছে । মানে স্যার ১ ঘন্টা আগে চালু ছিল । না মানে ওখানে বিল্ডিং হচ্ছে না । স্যার কোন বিল্ডিং ? না মানে কিছুনা, তুমি চালাও , আমি মনে হয় কোথাও ভুল বলছি ।




স্যার আমরা ব্যারাকপুর স্টেশন চলে এসেছি । হ্যা , আমায় একটা ভ্যান দেখে দেবে । হ্যা দাদা দেখে দিচ্ছি । এই ভ্যান , এই ভ্যান এই দিকে এসো , ভ্যান ওয়ালা বললেন , হ্যাঁ বাবু বলুল । ওই বাবুর সঙ্গে কথা বলো । এই তুমি ওই বাক্সটা নিয়ে, তালতলা যেতে পারবে । হ্যাঁ বাবু অামি যাবেন । শোনো ড্রাইভার মনে রাখবে , ওখানে এস এন স্টোর ও শপিং মল বলে একটি বিল্ডিং হচ্ছে বলে, রাস্তা বন্ধ ছিল । ড্রাইভার হা করে শুনলেন , কিছু বলার আগে বা ভাবার অগে,  এই বলে অজ্ঞাত পরিচয় হীন ব্যক্তি , ছোটো হাতিকে টাকা মিটিয়ে, ইলশাগুঁড়ির মমতাময়ী স্পর্শে, ভ্যানের আধা বাংলা বলা মানুষটিকে সারথী বানিয়ে চলতে থাকলেন । ওদিকে ড্রাইভার গাড়িতে বসে , ভাবতে থাকলেন । আর মনে মনে ভাবলেন, একটা পাগলের সঙ্গে কিছু সময় কাটালাম ।




বেশ কিছু রাস্তা যাওয়ার পর, অজ্ঞাত পরিচয়হীন ব্যক্তি বলে উঠলেন ভ্যানওয়ালাকে উদ্দেশ্যে করে সুনি চাচা বাঁয়ে মোড়ো, ভ্যানওয়ালা বলে উঠল, কি কি বাবু, মুছে কিয়া বোলা আপ, বাঁয়ে মোড়ো বোলা তোমাকে । নাহি কিয়া নামসে পুকারা ? ... আমি তোমাকে কিয়া নামসে পুকারা, কুছু না । হাম শুনা বাবু , সুনি চাচা । ভুল শুনেছো । আমি তুমাহারা নাম কেমন ভাবে জানবো । কুছ কানো সুনি চাচা শুনা, উ নামসে হামকো সমী দাদাবাবু পুকারতা হ্যায় । বড়ো আচ্ছা দাদাবাবু । সমী কন্ হ্যায়, অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি বললেন । ও দাদাবাবু আছে, সমীরণ শিকদার , ভ্যানওয়ালা বললেন। ওর বাড়িতে আমাকে নিয়ে চলো । আচ্ছা বাবু । এখন কিছুটা বৃষ্টি ধরেছে । ইলশেগুড়ি কমে গেছে । তবে হালকা মেঘাচ্ছন্ন আকাশ । সূর্যের আলো হালকা রঙে পরিবেশকে , বেশ টাটকা লাগছে । ড্রেন দিয়ে জল বয়ে যাওয়ার শব্দ, ও জলে ওপর দিয়ে ভ্যান চলার শব্দ একটা প্যারোডির সৃষ্টি হয়েছে । অবশেষে ভ্যান গিয়ে পৌছে গেল তার গন্তব্য স্থানে ।

ভ্যানওয়ালা সন্দেহ চোখে শিকদার দের বাড়ির কাছে এনে বলল, বাবু আপ শিকদার পরিবার কো কেয়েসে পয়েচান্তেহো । তোমার পয়সা নিয়ে চলে যাও । এই বছরটা বিশেষ করে এপ্রিল মাসে একটু সাবধানে থাকো । যাও এখেন থেকে পারলে, এপ্রিল মাসের কুড়ি তারিখে , ভ্যান নিয়ে তোমার না বেড়ানো ভালো । যাও এখন , যাও যাও- এতো গুলো কথা অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি বললেন । আর ভ্যান ওয়ালা সুনিল ভয়ার্থ চোখে শুনছিলেন । এবং ভয় সেখান থেকে তিনি প্রস্থান করলেন । আর অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিটি শিকদারের বাড়ি দিকে এগিয়ে গেলেন ।




সমী দৌড়াদৌড়ি করোনা, তুমি খুব বিরক্তি করছো - সমীর মা বললেন । না মা আমি একটু খেলা করি । না সমী করবেনা , খেলবে না , আর এটা কোনো খেলা নয় । মা দেখো না আমি এটা বানিয়েছি , কি এটা সমী আগে আমায় বল । এটা একটা গাড়ি। ও তাই এটা কি গাড়ি বোকা ছেলে । এটাতে বসে তুমি , ইচ্ছা মতো যেকোনো স্থানে যেতে পারো । তা কোথায় কোথায় সমী বেটা ? তুমি চাইলে , তোমার ভগবান কৃষ্ণের কাছে যেতে পারো । তুমি চাইলে চাঁদে যেতে পারো । যেকোনো যায়গায় যেতে পারো । ও বাবা আমার বৈজ্ঞানিক বেটা, তোমার এই বাক্স ও সরি বেটা , এই গাড়িটি আমায় এই গরমের ছুটিতে মঙ্গলগ্রহে ঘুড়তে নিয়ে যাবে । হ্যা তাইতো বলছি মামমা । তো তোমার এই গাড়ির নাম কি রাখবে, চাকাহীন গাড়ি । না মামমা তুমি তো বললে, বাক্স এই মানে কালো বাক্স । ঠিক সেই সময় ঘরের কলিং বেলটা বেঁজে উঠল। টিং টং........

সমাপ্ত ( পরবর্তী অংশ কিছু দিন পর আসবে )

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ